product images
কয়েদী ৩৪৫
by সামি আলহায

Tk. 185 Tk. 235 Save TK. 50 (21%)

কয়েদী ৩৪৫ (পেপারব্যাক)

Author : সামি আলহায
Category : মুসলিম ব্যক্তিত্ব
Publisher : প্রজন্ম পাবলিকেশন
Price : Tk. 185 Tk. 235 You Save TK. 50 (21%)

সারাদেশে হোম ডেলিভারি চার্জ মাত্র ৭০ টাকা # ১৪৯৯+ টাকার বই অর্ডার করলেই পাচ্ছেন ফ্রি হোম ডেলিভারি !

বি:দ্র: গ্রাহক বইটি অর্ডার সম্পূর্ণ করার পরে যদি নতুন সংস্করণের মূল্য পরিবর্তন হয় তাহলে বইটি পাঠানোর আগে আপনাকে আমাদের টিম ফোন করে জানিয়ে দিবে ।

Order Now

Services & Supports


Cash On Delivery
3 Days Happy Return
Delivery Charge Tk. 50(Online Order)
Purchase & Earn
Order Now

সারাদেশে হোম ডেলিভারি চার্জ মাত্র ৭০ টাকা # ১৪৯৯+ টাকার বই অর্ডার করলেই পাচ্ছেন ফ্রি হোম ডেলিভারি !

বি:দ্র: গ্রাহক বইটি অর্ডার সম্পূর্ণ করার পরে যদি নতুন সংস্করণের মূল্য পরিবর্তন হয় তাহলে বইটি পাঠানোর আগে আপনাকে আমাদের টিম ফোন করে জানিয়ে দিবে ।


প্রথম রমাদান || কয়েদী ৩৪৫

গুয়ান্তানামোতে আমরা কখনো চোখ জুড়ানো পাল তোলা নাও দেখিনি। শুনি নি নাওয়ের কুলকুল শব্দ কিম্বা ঝিরিঝিরি বায়ু প্রবাহ। সেখানে চোখ জুড়ানো প্রাকৃতিক দৃশ্য নয়, দেখেছি নির্মমতা। দেখেছি শুধু মৃতদেহগুলো আমাদের কারাগার ত্যাগ করছে। আর নিস্তেজ নিরুপায় দেহগুলো কারাগারে প্রবেশ করছে। নির্যাতন আর কষ্টের মধ্যেই চলে রমাদান। সেটা শুধু ক্ষুধা সহ্য করা নয় বরং অপমান-অপদস্থ, লাঞ্ছনা-যন্ত্রনা সহ্য করাও। তার সাথে যোগ হত মানসিক চাপ, প্রলোভন প্ররোচনা এবং অন্তহীন জবাবদিহিতা।

মনে হতো আকাশটা ভেঙে নিচে পড়ে গেছে। তার নিচে চাপা পড়েছি আমি। দম আমার যায় যায়। আমাদের এখানে, গুয়ান্তানামোর নির্যাতকরা বেহুঁশ, উন্মাতাল। নির্যাতন করেই যেত। যতক্ষণ না নির্যাতিতরা নির্যাতন সইতে না পেরে তাদের পায়ে লুটিয়ে পড়ে। যতক্ষণ না তাদের সকল প্রতিবাদশক্তি নিঃশেষ হয়। যতক্ষণ না দেহগুলো নিথর হয়।

আমরা প্রথম রমাদানের প্রস্তুতি নিই। প্রহরীদের বলে দেই সন্ধ্যা নামার পূর্ব পর্যন্ত আমরা কিছুই খাব না। ইচ্ছে করেই তারা আমাদের খাবার সবসময় একটু দেরিতে দিত। মাগরিবের আযান শোনার চার ঘন্টা পর আমরা খাবার পেতাম। রমাদানের খাবার প্যাকেট করে দিত না। তারপরও দুঃখজনকভাবে সেটার পরিমাণ তখন অনেক কমে যেত। রমাদানের প্রথম ও শেষ দিনগুলো অনেক কষ্টে যায়। পবিত্র মাসের শুরুতে ও শেষে চাঁদ দেখার প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমাদের সবগুলো ব্লক তা দেখতে পেত না। প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ক্যাম্পের লোকেরা দেখতে পেত। কিছু ক্যাম্পের লোকেরা সূর্য-চন্দ্র দুইটাই দেখতে পেত। আমি তাদের মধ্যে নেই। এই দ্বিধাদ্বন্দ্বে আমরা ৩০টি দিন রোজা রাখি। বছরের শ্রেষ্ঠ দিনগুলো পার করি।

প্রথম রমাদান হতেই প্রশাসন শাস্তির নতুন বিন্যাস প্রকাশ করে। যার বিবরণ আমি আগেও দিয়েছি। সেই বিন্যাসের মূল কথা হলো কোন কয়েদীকে অসদাচারনের (!) কারণে, মৌলিক অধিকার চাওয়ার কারণে, অথবা জিজ্ঞাসাবাদকারীকে সহায়তা না করার কারণে নির্যাতন করা। তারা আমাদের উপর বিভিন্ন মাত্রার শাস্তি প্রয়োগের প্রতিযোগিতা করতো। এসব দেখে আমরা আর শাস্তির মাত্রা নিয়ে প্রশ্ন তুলতাম না।

এই প্রশ্ন না তোলার সুযোগে তারা বন্দিদেরকে ভিন্নভিন্ন মাত্রায় শাস্তি দিতো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। তারা ভিন্ন ভিন্ন জাতীয়তার মানুষকে ভিন্ন ভিন্ন শাস্তি দিত। লেভেল-১ শাস্তি দেওয়া হত প্রথম ক্যাম্পের কারাবন্দিদের। আমাকে দ্বিতীয় ক্যাম্পে স্থানান্তরিত করা হয়। হাম্মাদ রশিদ ও মোহাম্মাদের কাছ থেকে পৃথক হয়ে যাই।

দ্বিতীয় ক্যাম্পের কিলো ব্লকে আমি মাত্র দুই দিন ছিলাম। তৃতীয় দিন যখন আমাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন একজন আমার নাম ধরে ডাকলো। তিনি ছিলেন জামাল আবু ওয়াফা। একজন ইয়ামেনী নাগরিক। তিনি আজারবাইজানে হারামাইন ফাউন্ডেশনের পরিচালক ছিলেন। যাই হোক, আমি তখন তাকে চিনতে পারিনি। দু’দফা তার সাথে কথা হয়। প্রশ্ন করি: “কেন তারা আপনাকে এখানে নিয়ে এসেছে?”

আমি তার উত্তর শুনতে পাইনি। কারণ সৈন্যরা আমাকে নিয়ে দ্রুত ছুটছিল। বুঝতে পারলাম যে আমাকে লেভেল-৪ এর ট্যাঙ্গো ব্লকের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রশ্ন করলাম: “কেন আমাকে লেভেল-২ থেকে লেভেল-৪ এ নেয়া হচ্ছে?

সৈন্যরা উত্তরে বললো তারা এর কারণ জানে না। তাদেরকে শুধু কাজের আদেশ করা হয়েছে। বাস্তবায়ন নীতি নিয়ে ভাবতে নয়। ট্যাঙ্গোতে আমি একদিন ছিলাম। এরপর আমাকে সিয়েরা ব্লকে নিয়ে যাওয়া হয়। বন্দিরা একইভাবে বিভিন্ন দেশের। আমার প্রতিবেশি সৌদি আরবের আব্দুর রহমান আল ওমারি। আলজেরিয়ান একজনও সেখানে ছিল। তার নাম শায়খ আল মাতি। তিনি একজন ধর্মীয় প-িত। পড়াশোনা করেছেন সিরিয়ায়, অন্যান্য অনেক দেশে।

শীঘ্রই আমি বুঝতে পারলাম কেন আমাকে লেভেল-৪ এ নিয়ে আসা হয়েছে। আমাকে এখানে আনার কারণ আমার জিজ্ঞাসাবাদকারীর সাথে বিবাদে জড়ানো। বিবাদে জড়ানো মানে তাদের মনমতো কাজ না করা। গুপ্তচরের চাকরি না করা। কিন্তু তারা পুরোপুরি হতাশও নয়। একদিন আমাকে নিয়ে গেল জিজ্ঞাসাবাদে। জিজ্ঞাসাবাদকারী একজন আরব। কুয়েতি টানে কথা বলেন। নিজের পরিচয় দিলেন আদিল নামে। বললেন, “আমি ইরাক থেকে এসেছি। কিন্তু থাকি কুয়েতে।”

আমরা কথা বললাম। বললেন এক সময় তার সাথে মার্কিনীদের একটা ঝামেলা হয়। তাকে সতেরো মাস আটক করে রাখা হয়। এরপর তাদের সাথে একজন দোভাষীর কাজ করতে অফার করা হয়। এর বিনিময়ে তিনি মুক্তি, মুক্তির স্বাদ দুটোই পাচ্ছেন।

জিজ্ঞাসাবাদের সে কক্ষে একজন নারী সেনা অফিসারও ছিল। রাগে সে কটমট করছিল। চোখমুখ আগুন। নিষ্ঠুর আর প্রতিশোধের অভিব্যক্তি। সে বললো: “তুমি কয়েদী নম্বর ৩৪৫। আমি তোমার কাগজপত্র ঘেটে দেখেছি। তোমার সাথে আমাদের আসলে তেমন ঝামেলা নেই। তুমি এখানে ভুল করে চলে এসেছো। আমরা সে ভুলের যবনিকা টানতে চাই। তোমাকে মুক্তি দিতে চাই।”

আমি চুপচাপ শুনছিলাম। সে বলে চললো: “আমাদের সামান্য কিছু কাজ করতে হবে। আমরা সেটা করবো তোমার কাগজপত্র নিয়ে, আরো কিছু কাজ করার পর।”

জিজ্ঞেস করলাম, ‘সামান্য কিছু জিনিস বলতে কী বোঝাতে চাচ্ছেন?’

“তুমি কি আমাদের সাথে কাজ করতে সম্মত নও?” নারী সেনা অফিসারটি জিজ্ঞেস করলো।

“আপনি কোন কাজের কথা বলছেন?”

“আমাদের সাথে কাজ করা মানে আমাদের সাথে কথা বলা। এখন যেভাবে বলছেন।”

“না, আমি বলিনি আমি আপনাদের সাথে কাজ করবো। আমি এখন আপনাদের সাথে কোন কাজ করছি না। কিভাবে ধরে নিলেন আমি আপনাদের সাথে কাজ করবো?

“তুমি কি বল নি তুমি আমাদের সাথে সহযোগিতা করবে?”

“সহযোগিতার অর্থ ভিন্ন। আমি আপনাদের জিজ্ঞেস করা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সহযোগিতা করবো। কিন্তু আপনাদের সাথে কোন প্রকারেই কাজ করবো না।”

“তুমি কি বুঝে শুনে বলছো?”

“হ্যাঁ”।

“আশ্চর্য”। নারী অফিসারটি বলে চললেন: তারা (কারা কর্মকর্তারা) আমাকে বলেছে তুমি কাজ করবে। তোমার সাথে যেন একটা মিটিং করি। তুমি নাকি আমাদের সাথে কাজে নেমে পড়তে প্রস্তুত হয়ে আছো।

“না, আমি এরকম বলিনি। আমি শুধু আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্য প্রস্তুত আছি। সে প্রশ্ন আমাকে নিয়ে, আমার অন্যান্য কাগজপত্র নিয়ে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে। সম্ভবতঃ কোন ভুল হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে তুমি নাকি আমাদের সাথে কাজ করতে প্রস্তুত আছো। আর প্রস্তুতি নিতে গেলে কি কি জিনিস জানতে হবে সেসব জানাতেই মূলতঃ আমার আসা।”

“মনে হয় কোন ভুল তথ্য পেয়েছেন আপনি। অথবা কোন ভুল কেস ফাইল আপনার হাতে পড়েছে”, বললাম।

“না, তারা আমাকে বলেছে কয়েদী ৩৪৫ আমাদের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে”, নারী সেনাটি বললো।

“আপনার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আবারো যোগাযোগ করে যাচাই করে নিন। আমি আপনাদের সাথে কাজ করতে প্রস্তুত নই।”

তারা আমাকে আমার সেলে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। পরে তারা আবার আমাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকে। এবার আসে আরেকজন নারী অফিসার।

বলে,“আমি তোমাকে একটি বিষয় জিজ্ঞেস করতে এসেছি। তোমার কোন সমস্যা আছে? (থাকলে বলো) আমি তোমাকে সাহায্য করতে চাই।”

বললাম, “আমার একমাত্র সমস্যা আমি এখানে বন্দি। এই গুয়ান্তানামোতে।”

“হ্যাঁ, আমি জানি এটা একটা সমস্যা। আমরা সেটা সমাধানের চেষ্টা করছি। তুমি শীঘ্রই তোমার পরিবারের কাছে ফিরে যাবে। আমরা তোমার সাথে আগামী সপ্তাহে আবার সাক্ষাত করবো। বিশেষ কোন খাবার আাছে যেটা তুমি খুব পছন্দ করো?”

আহ্! এ এক দুর্বলতা আমাদের। জিজ্ঞোসাবাদকারীরা এই দুর্বল জায়গায় আঘাত করে। ক্যাম্পে যে খাবার আমাদের দেয়া হয় তা খুবই সামান্য, মানহীন, অপর্যাপ্ত। আর আমরা সব সময় জানতেও পারতাম না এ খাবার কিসের তৈরি! জিজ্ঞসাবাদকারীরা আমাদের ভাল খাবারের প্রলোভন দেখায়। ক্ষুধার্ত, অসহায় কয়েদীদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে।

“না, আমার কিছু প্রয়োজন নেই,” বললাম।

“কিছু একটা বলতেই হবে”, সে জোর দিয়ে বললো।

“তাহলে দিন একটা কিছু। আপনাদের যা মনে চায়।” বললাম।

“যা দেব তাই খাবেন?” সে বললো।

আমি কোন গোস্ত খেতে চাই না। কারণ, জানি না এই গোস্ত হালাল কিনা। শরিয়তসম্মত উপায়ে জবাই করা কিনা!

বললাম, “কিছু মাছ ও সবজি দিতে পারেন।”

“আমরা আপনার জন্য সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করবো,” সে বললো।

“দু’সপ্তাহ পর, তারা আমাকে আবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠায়। বলে, আমার জন্য কিছু মাছ নিয়ে এসেছে। কক্ষে প্রবেশ করলাম। তারা আমার সামনে রান্না করা মাছ নিয়ে এলো।

“আপনারা কী করছেন?” তাদের বললাম।

তারা বললো, “আমরা আপনাকে রেখে যাচ্ছি যাতে আপনি পছন্দমতো খেতে পারেন।”

“আমি রোজা রেখেছি,” বললাম।

“কোন সমস্যা নেই, আমরা খাবার রেখে দিচ্ছি। কখন রোজা ভাঙবেন?”

“রোজা ভাঙবো সূর্যাস্তের পরপর। কিন্তু এ খাবার আমার দরকার নেই। আমরা যে খাবার পাই তাই যথেষ্ট।”

“না, আমরা আপনাকে খাওয়াবো। আপনার রোজা ভাঙার সময় খাবার তৈরি করে দেব।”

সূর্য ডোবার আধাঘন্টা আগে তারা আবার আমাকে আমার সেল থেকে বের করে নিয়ে যায়। শায়খ মাতিকে আমার সাথে ঘটা সব কিছু বিস্তারিত বললাম। সব শুনে তিনি বললেন: “সামি, এসব আল্লাহর পক্ষ হতে রহমত। আল্লাহর নাম নাও আর খাও। আর তোমার উপর জুলুমকারীদের বিচার চেয়ে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানাও।”

আমি গেলাম। খাবার প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। মাছ ও সবজির পাশাপাশি রাখা হয়েছে মিষ্টি, চকোলেট, জুস এবং ফল। গ্রেপ্তারের পর এটাই ছিল আমার প্রথম তৃপ্তি সহকারে খাবার গ্রহন। আমি সংকোচ বোধ করলাম না। ক্ষুধায় কাতর। দুর্বল শরীর। তাই পেটপুরে খেলাম। আমার উপর জুলুমকারীদের মুখ কখনো ভুলতে পারবো না। তাদের ফায়সালা আল্লাহর কাছে সমর্পণ করলাম।

খাওয়া শেষে যখন আমি আমার সেলে চলে আসলাম দেখলাম তখন মাত্র আমার সহকয়েদীদের খাবার দেয়া হচ্ছে। সৈন্যরা জানতো আমি সবেমাত্র খেয়ে এসেছি। আমাকে নিয়ে আসার সময় তারা আমার খাওয়া নিয়ে বলাবলি করছিল। তারা আমাকে ফিসফিস করে খেয়ে আসার ব্যাপারটা গোপন রাখতে বলল। যাতে বন্দিরা আমার ব্যাপারে কোন ধারনা করতে না পারে।


Title কয়েদী ৩৪৫
Author সামি আলহায
Translator মুহসিন আব্দুল্লাহ
Publisher প্রজন্ম পাবলিকেশন
Pages 176
Edition 2nd Edition, 2021
Country Bangladesh
Language Bangla

Durbarshop Author Image

সামি আলহায


This is Review

Reviews and Ratings